“ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” – বাক্যটা শ্রুতিমধুর তবে ঈমান বিধ্বংসী

“ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” – বাক্যটা শ্রুতিমধুর তবে ঈমান
বিধ্বংসী। যেসব উৎসবের মূল ধর্মীয় আচার বা বিশ্বাস,
সেগুলো সেই ধর্মাবলম্বীর সাথেই বিশিষ্ট। অন্য
ধর্মের কেউ তা পালন করলে স্বধর্ম
ছেড়ে আসতে হবে।
একজন হিন্দু কখনো মুসলিমের সাথে আল্লাহর
নামে কুরবানীতে অংশ নিতে পারে না। নিলে সে আর
হিন্দু থাকে না। মুসলিম হয়েই পরে অংশ নেয়।
আবার একজন মুসলিম পূজার অনুষ্ঠানে যোগ
দিতে চাইলে তাকে ইসলাম ত্যাগ করে যোগ দিতে হয়।
ইসলামের গণ্ডির ভেতর থেকে পূজায় অংশ নেয়ার
কোনো সুযোগ নেই। ইসলামের মূল বক্তব্য
হলো তাওহীদ বা একত্ববাদ। আর পূজায় তা বাদ
দিয়ে অন্যের উপাসনা করা হয়।
গত কয়েকদিন আগে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসএমএস
আসল। “May Maa bless you with happiness all the year
through…” বাকী অংশে পূজার শুভেচ্ছা জানানো হল।
এসএমএসটি কয়েক ধাক্কায় পড়তে পারলাম। “May Maa bless
you” এমন ব্যবহার কখনো করি নি, কোথাও করতে শুনিও
নি। প্রথম কয়েকবারই মনে হচ্ছিল, কী যেন একটা ভুল
হয়েছে এসএমএসটিতে। পরে বুঝতে অসুবিধা হয় নি,
এটা “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” থিওরির প্রসব-কৃত।
ইসলামে Maa এর bless করার কোনো ক্ষমতা নেই।
একমাত্র bless-কারী আল্লাহ তায়ালা। জীবন-মৃত্যু,
রিযিকে প্রশস্ততা-সংকট, সুস্থতা-অসুস্থতা – সবই তাঁর একক
ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। তিনি এক ও একমাত্র, তাঁর সমকক্ষ
তো দূরের কথা, ধারে-কাছেও কেউ নেই।
ইসলামে মা-বাবা, স্বামী-বস, শিক্ষক
ইত্যাদি কারো কোনো ক্ষমতা নেই। সবাই সাধারণ মানুষ।
তাই তো তাদের পূজা করা বা বিশেষ সম্মানে তাদের
সামনে নত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আল-কুরআন ও সুন্নায় স্বামী-স্ত্রীর জন্য নির্বাচিত শব্দ
“ ﺯﻭﺝ ”। এর অর্থ “জোড়া”। এক জোড়া মোজার
মধ্যে কোনটির সম্মান বেশি, বলা যায় কি?
ইসলামে স্বামী স্ত্রীর অবস্থা ঠিক একই রকম।
উভয়ে একে অপরের সমান সঙ্গী। এক
জোড়া মোজার একটিকে বাদ দিলে অপরটির
কোনো মূল্য নেই। স্বামী-স্ত্রীও তেমন।
তবে পারিবারিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পুরুষ দায়িত্বশীল,
পরিবারের খাদিম সে।
যা হোক, পূজায় অংশ নিলে ইসলামের এই একত্ববাদের
বিশ্বাস বিসর্জন দিয়ে আসতে হবে। একই সাথে হাঁ-
না বা এক-দুই একত্রিত হতে পারে না। হয় হাঁ নয় না, হয় এক নয়
দুই। মাঝামাঝি কোনো জায়গা নেই, কোনো সেফ
জোন নেই, দুই দেশের সীমানার মাঝের জায়গার মত।
অনুরূপভাবে, পূজার শুভেচ্ছা জানানোরও
কোনো সুযোগ নেই। কারণ শুভেচ্ছা হলো কল্যাণ
কামনা করা। অর্থাৎ, পূজা যেন ঠিক মত হয় সে কামনা-
প্রার্থনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, একজন মুসলিম আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা করছে যেন, তাঁর সাথে কৃত শিরক ঠিক মত
সম্পন্ন করা যায়। কত বড় ভয়ানক বিষয়!
তবে হ্যাঁ, একজন মুসলিম অন্য ধর্মের উপাসনা, তাদের
উপাসনালয় ও তাদের ধর্মকে কটাক্ষ করা,
ইত্যাদি থেকে সবসময় বিরত থাকবে।

একজন মুসলিম সবসময়ই সচেষ্ট হবেন, তাঁর আখলাক
দিয়ে, তাঁর অমুসলিম ভাইকে, ইসলামের দিকে আহ্বান
করতে। কুরবানী কেন করা হয়, এ
বিষয়টি তাকে বুঝানো যেতে পারে। তাকে কুরবানীর
গোশত দেয়া যেতে পারে, বিশেষ
করে যদি তিনি প্রতিবেশী-আত্মীয় বা গরীব হন
এবং কোনো ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের
সাথে যুক্ত না হন।
একবার আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. এঁর একটি বকরী যবেহ
করা হলো। তিনি বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন, আমাদের
ইহুদী প্রতিবেশীকে কি দিয়েছ? আমাদের
ইহুদী প্রতিবেশীকে কি দিয়েছ? আমি রাসূল স.
কে বলতে শুনেছি, জিবরাইল আমাকে প্রতিবেশীর
ব্যাপারে এত বলেছে যে, আমার মনে হয়েছে যে,
তাকে উত্তরাধিকারও বানানো হবে। [তিরমিযী: ১৯৪৩]
(তবে ওয়াজীব কুরবানীর গোশত মুসলিমদের মাঝেই
বন্টন করা উচিৎ। কারণ এটি একটি ইবাদাত)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঈমানের ওপর অটল রাখুন।
আমীন।

Leave a comment